হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার

 

৩৬০ আউলিয়ার সিলেট নগরী ‘পূন্যভূমি’ হিসাবে খ্যাত। সিলেটের মাটিতে যেসব পীর, দরবেশ শায়িত আছেন এদের মধ্যে হযরত শাহজালাল (রঃ) অন্যতম। আর এজন্য তাঁকে ওলিকুল শিরোমণি বলা হয়। হযরত শাহ জালাল (রঃ) সকল ধর্মের মানুষের কাছে সমাদৃত ছিলেন। প্রতি বছর হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার জিয়ারতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ঢল দেখা করা যায়।

কি দেখবেন

হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজারের উত্তরদিকে একটি পুকুর রয়েছে। এই পুকুরের শোভা বর্ধন করে আছে অসংখ্য গজার মাছ। কথিত আছে, হযরত শাহজালাল (রঃ) ৩৬০ আউওলিয়া নিয়ে সিলেট আসার সময় গজার মাছ নিয়ে এসেছিলেন। এসব মাছকে পুকুরে ভেসে বেড়াতে দেখে দর্শনার্থীরা আনন্দ লাভ করেন ও মাছেদের খাবার খেতে দেন। শাহজালাল (রঃ) এর মাজারের পাশে একটি কূপ রয়েছে। এই কূপে সোনালী ও রুপালী রঙের মাছে দেখা যায়।

জনশ্রুতি আছে, হযরত শাহজালাল (র:) এর আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কথা জানতে পেরে হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (র:) তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং নিদর্শন স্বরূপ তাঁকে একজোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দেন। সেই কবুতরই বর্তমানে জালালী কবুতর নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। মাজারের ঝাঁকেঝাঁকে কবুতর আগতদের বিনোদিত করে।

মাজারের দক্ষিণে গ্রীলঘেরা তারকা খচিত মাত্র দুইফুট চওড়া একটি ঘরটি রয়েছে। এটি হযরত শাহজালাল (রঃ) চিল্লাখানা হিসাবে ব্যবহার করতেন। লোকমুখে শুনা যায়, হযরত শাহজালাল (রঃ) এখানে প্রায় ২৩ বছর আরাধনা করে কাটিয়েছেন। দরগাহ মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে বাঁ দিকে মুফতি নাজিমুদ্দিন আহমদের বাড়িতে হযরত শাহজালাল (রঃ) এর ব্যবহৃত তলোয়ার, খড়ম, প্লেট, বাটি ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।

হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মূল দরগা শরীফ একটি পবিত্র স্থান, ভ্রমণের ক্ষেত্রে দরগার পবিত্রতার দিকে লক্ষ্য রাখুন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সিলেট

ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি ও এনা পরিবহনের এসি/নন-এসি বাস ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচল করে। সিলেটগামী এসি বাসে ভাড়া ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে।

ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার এবং ইউএস বাংলার বিমান সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে বাস, ট্রেন ও আকাশপথে সিলেট যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে।

সিলেট থেকে শাহজালাল মাজার

সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড হতে সিএনজি, রিকশা বা অটোরিকশা দিয়ে সহজেই মাজারে যাওয়া যায়। রিকশায় গেলে সাধারণত ভাড়া লাগে ২০-২৫ টাকা আর সিএনজিতে গেলে ৮০-১০০ টাকা ভাড়া লাগবে।

কোথায় থাকবেন

লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন। এছাড়াও হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন।

কি খাবেন

সিলেটর জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভ মূল্যে পছন্দমত নানা রকম দেশী খাবার খেতে পারেন। এইসব রেস্টুরেন্টের বাহারী খাবার পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, আপনার পছন্দ মত যে কোন জায়গায় খেয়ে নিতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

হযরত শাহজালালের দরগাহ ছাড়াও সিলেট শহর এবং সিলেটের আশেপাশে যে সকল দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হলো, হযরত শাহপরাণ মাজার, মালনীছড়া চা বাগান, জাফলং , বিছানাকান্দি , রাতারগুল, লোভাছড়া, লালাখাল, পান্থুমাই ঝর্ণা, ক্বীন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি, হাকালুকি হাওর, ভোলাগঞ্জ, ড্রিমল্যান্ড পার্ক, জাকারিয়া সিটি ইত্যাদি।


No comments

Translate

Powered by Blogger.