হযরত শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজার (Hazrat Shah Paran (RA)) সিলেট শহরের অন্যতম একটি আধ্যাতিক স্থাপনা। হযরত শাহ পরাণ (রঃ) ছিলেন মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম প্রচারক শাহ জালাল (রঃ) এর ভাগ্নে এবং প্রধান অনুসারী। হযরত শাহ জালাল (রঃ) এর দরগাহ থেকে শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজারের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় বড় একটি টিলার উপর হযরত শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজারের অবস্থান।

লোক মুখে প্রচলিত আছে হযরত শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজার টিলায় উঠা-নামার জন্য তৈরী সিঁড়িটি মোগল আমলে নির্মিত। মাজারের পশ্চিম দিকে রয়েছে মোগল স্থাপত্বরীতিতে নির্মিত একটি মসজিদ। মূল মাজার টিলা থেকে অল্প দূরত্বেই রয়েছে নারী পর্যটকদের জন্য একটি ঘর, বিদেশী পর্যটকদের বিশ্রামাগার এবং অজু গোসলের জন্য একটি পুকুর।

১৩০৩ সালে হযরত শাহ জালাল (রঃ) এর সাথে হযরত শাহ পরাণ (রঃ) এর সিলেট আগমন সম্পর্কে তথ্য থাকলেও কিভাবে এবং কখন হযরত শাহপরাণ (রঃ) মৃত্যুবরণ করেন তা জানা যায়নি। প্রতিদিন শত শত ভ্রমণকারী দ্বারা মাজার দর্শন সিলেট অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামের প্রচারে হযরত শাহ জালাল (রঃ) এর অবদানকেই স্পষ্ট করে তোলে।

কিভাবে যাবেন

সিলেট শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে রিকশা, অটোরিক্সা কিংবা সিএনজি ভাড়া করে সহজেই হযরত শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজার দর্শনে যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে সিলেট
ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের বাস ছেড়ে যায়৷ ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে, এগুলোর ভাড়া সাধারণত ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এনা পরিবহনের নন এসি বাস জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা ভাড়ায় পাবেন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে।

ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে সিলেট যেতে চাইলে আকাশ পথে গমন করতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার এবং ইউএস বাংলার বিমান নিয়মিতভাবে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট
চট্টগ্রাম থেকে বাস, ট্রেন ও আকাশপথে সিলেট যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে।

কোথায় থাকবেন

সিলেট শহরে রাত্রিযাপনের জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। তবে শাহজালাল দরগা গেইট এবং লালা বাজার এলাকায় অবস্থিত হোটেলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখানকার হোটেলগুলোতে মানভেধে ৪০০ থেকে ৩০০০ টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

সিলেটের উল্লেখযোগ্য আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে- দরগা গেইটের হোটেল স্টার প্যাসিফিক (০৮২১-৭২৭৯৪৫) এবং হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬), শাহজালাল উপশহরে অবস্থিত হোটেল রোজ ভিউ(০৮২১-৭২১৪৩৯), ভিআইপি রোডে অবস্থিত হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৬০৭৭), নাইওরপুলের হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০), বন্দরবাজারে অবস্থিত হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (০৮২১-৭২১১৪৩), লিঙ্ক রোডের হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭), আম্বরখানার হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯), হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩), জিন্দাবাজারের হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০), তালতলায় অবস্থিত গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮), জেল সড়কে অবস্থিত হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)।

কোথায় খাবেন

মালনীছড়া চা বাগান এলাকায় খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে জিন্দাবাজার এলাকায় বেশকিছু জনপ্রিয় রেস্তোরা রয়েছে। যার মধ্যে পানশী, পাঁচভাই, ভোজনবাড়ি, প্রীতিরাজ, স্পাইসি এবং রয়েলশেফ রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সিলেটে তুমুল জনপ্রিয় সাতকরা (হাতকরা) এবং আথনী পোলাও খেয়ে দেখতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সিলেট শহর ও সিলেটের আশেপাশের আরো যেসকল দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হলো- হযরত শাহজালালের মাজার, মালনীছড়া চা বাগান, জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, লোভাছড়া লালাখাল, পান্থুমাই ঝর্ণা, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, আলী আমজাদের ঘড়ি, হাকালুকি হাওর, ভোলাগঞ্জ, ড্রিমল্যান্ড পার্ক, জাকারিয়া সিটি ইত্যাদি।