রোজ গার্ডেন প্যালেস

 

রোজ গার্ডেন প্যালেস (Rose Garden Palace) রাজধানী ঢাকার টিকাটুলিতে অবস্থিত। ১৯ শতকে হৃষিকেস দাস নামের এক হিন্দু জমিদার বিনোদনের জন্য রোজ গার্ডেন প্যালেসটি নির্মাণ করেন। তৎকালীন সময় বিত্তবান হিন্দুদের সামাজিক অনুষঙ্গ হিসাবে বলধা গার্ডেনে জলসার আয়োজন করা হত। হৃষিকেস দাস ছিলেন নিন্মবর্ণের ফলে এক জলসায় তিনি অপমানের স্বীকার হন। এরপর হৃষিকেস দাস বিনোদনের জন্য রোজ গার্ডেন প্যালেস তৈরী করেন এবং এখানেই জলসার আয়োজন করতেন। ঐ সময়ে এই বাগানবাড়ির নয়নাভিরাম সাজঘর ছিল মূল আকর্ষণ। বেহিসাবী জীবনযাপনের জন্য একসময় হৃষিকেস দাস দেউলিয়া হয়ে সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হন।

১৯৩৬ সালে হৃষিকেস দাসের কাছ থেকে খান বাহাদুর কাজী আব্দুর রশিদ এই বাগানবাড়িটি কিনে নেন। তিনি এই বাড়ির নাম পরিবর্তন করে রশিদ মঞ্জিল রাখেন। পরবর্তীতে কাজী আব্দুর রশিদের বড় ছেলে কাজী মোহাম্মদ বশির (হুমায়ুন) আজ পর্যন্ত এই বাড়ির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। শুরুতে এই বাগানবাড়ি শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি হলেও পরবর্তীতে এর মালিকরা এতে বসবাসও শুরু করেন।

রোজ গার্ডেন প্যালেসের এক ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ১৯৪৯ সালে এই রোজ গার্ডেনেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। বাড়িটির নীচতলায় একটি হলরুম, আটটি কক্ষ ও করিনথিয়ান কলাম রয়েছে। উপর তলায় আরো একটি হল সহ আরও পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। একসময় প্রাসাদ প্রাঙ্গণে একটি ঝর্ণা ছিল, বর্তমানে ঝর্ণাটি চালু না থাকলেও এর চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। প্রাসাদের সামনে বাগানে রয়েছে মার্বেলের তৈরি কয়েকটি সুদৃশ্য মূর্তি। তবে যেই গোলাপের বাগানের জন্য এই প্রাসাদটির নামকরণ রোজ গার্ডেন প্যালেস করা হয়েছিল সেই গোলাপ বাগান বর্তমানে নিশ্চিহ্ন।

সময়সূচী: রোজ গার্ডেনে প্রবেশের জন্য কোন ফি প্রদান করতে হয় না। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত রোজ গার্ডেন খোলা থাকে। তবে মূল ভবনের ভেতরে প্রবেশের জন্য পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান: রোজ গার্ডেনের কাছেই রয়েছে বলধা গার্ডেন ও খ্রিষ্টান কবরস্থান। হাতে সময় থাকলে বলধা গার্ডেন এবং পুরান ঢাকার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে যেতে পারেন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার যেকোন স্থান থেকে গুলিস্থান বা যাত্রাবাড়ী এসে রিক্সায় দিয়ে সরাসরি টিকাটুলির কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেন আসতে পারবেন। তবে রিকশাওয়ালাকে চেনানোর জন্য হুমায়ূন সাহেবের বাড়ির কথা বলতে হবে।

কোথায় খাবেন

খাবারের জন্য পুরান ঢাকার রয়েছে বিশেষ ঐতিহ্য। আল রাজ্জাক, হাজীর বিরিয়ানি, কাশ্মির কাচ্চি, বিউটি বোডিং কিংবা সুলতানের চা থেকে নিঃসন্দেহে বেছে নিতে পারেন যা খাবেন।

No comments

Translate

Powered by Blogger.