বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঐতিহ্যবাহী ৩২টি ভবনের মধ্যে অন্যতম, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৯৩টি ঐতিহাসিক নান্দনিক ভবনের তালিকার্ভুক্ত পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডে অবস্থিত শতবর্ষী পুরাতন একটি ভবনের নাম শঙ্খনিধি হাউস (Songkhonidhi House)। বিংশ শতকের শুরুতে লালমোহন সাহা, ভজহরি সাহা ও গৌর নিতাই সাহা নামের বণিক ভ্রাতৃত্রয় ব্যবসায় ব্যপক উন্নতির ফলে বণিক উপাধি বর্জন করে শঙ্খনিধি অর্থাৎ শঙ্খের বাহক উপাধি গ্রহণ করেন। ১৯২০-১৯২৬ সালে তাঁরা পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোড থেকে ওয়ারীর র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিটের বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু ভবন নির্মাণ করেন। তিন ভাইয়ের একজন লালমোহন সাহা ১৯২১ সালে শঙ্খনিধি হাউস নির্মাণ করেন।

দ্বিতল শঙ্খনিধি হাউস নির্মাণে গোথিক-ইন্ডিয়ান ও ইন্দো-সারাসিন রীতির প্রভাব দেখা যায়। মূল ভবনের দুইপাশে ৩টি করে প্রবেশ পথ এবং উত্তর দিকে একটি মন্দির রয়েছে। শঙ্খনিধি হাউজের পূর্ব দিকে প্রায় ৫০ ফুট প্রশস্ত একতলা বিশিষ্ট স্থাপনাটি শঙ্খনিধি নাচঘর নামে পরিচিত। নাচঘরটির কারুকার্যপূর্ণ ছাড়, রঙিন টালির দেয়াল এবং প্রবেশমুখ দেখতে অনেকটা হিন্দু মন্দিরের মতো মনে হয়। দক্ষিণমুখী শঙ্খনিধি হাউজ ভবনটি সমতল হতে ৫ ফুট উঁচুতে স্থাপন করা হয়েছিল। বারান্দায় প্রবেশের জন্য ছিল ২০ ফুট প্রশস্ত সোপান। নাচঘর ছাড়াও শঙ্খনিধি হাউজের বিভিন্ন আয়তনের ৫টি ঘর রয়েছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় শঙ্খনিধি হাউসের অধিবাসীগণ ভারতে চলে যায়। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে শঙ্খনিধি হাউস প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকার্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯১ সালে শঙ্খনিধি হাউসের একাংশ ও নাচঘর ভেঙে ফেলা হয়। বর্তমানে নাচঘরের স্থানে গ্র্যাজুয়েটস উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত।

কিভাবে যাবেন

দেশের যেকোন স্থান থেকে পুরান ঢাকার ৩৮ নম্বর টিপু সুলতান রোডে এসে হযরত খোরেদ শাহ (রঃ) এর দরবার শরীফের কথা জিজ্ঞাস করলে যেকেউ দেখিয়ে দেবে। শঙ্খনিধি হাউসের গা ঘেঁষে দরবার শরীফের অবস্থান।